Tuesday, June 28, 2022


চাচীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক। হাত গেল যুবকের। 


 নরসিংদীতে চাচির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগে যুবকের দুই হাতের কবজি কর্তন!


নরসিংদীর পলাশে পারিবারিক কলহের জেরে হাদিউল মিয়া (২৫) নামের এক যুবকের দুই হাতের কবজি কেটে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুবকের কথিত ফুপা ডাকাত জালাল মিয়া ও তার ভাতিজা সাজ্জাদ মিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।


মঙ্গলবার (২৮ জুন) ভোর ৪টার দিকে পলাশের নোয়াকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 


আহত হাদিউল নরসিংদীর শিবপুর থানার মোর্শেদ মিয়ার ছেলে।


অভিযুক্ত জালাল মিয়া নোয়াকান্দা গ্রামের আক্কাছ মিয়ার ছেলে ও সম্পর্কে আহত হাদিউলের ফুপা। আরেক অভিযুক্ত সাজ্জাদ মিয়া অভিযুক্ত আক্কাছ মিয়ার ভাতিজা।


আহত যুবকের পরিবার ও পুলিশ জানায়, হাদিউলের চাচা প্রবাসী। চাচির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন হাদিউল। এনিয়ে প্রায়ই হাদিউলের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের ঝগড়া হতো। কয়েকবার সালিশও হয়েছে। কয়েকদিন আগে হাদিউল ও তার চাচির বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে চাচিকে মারধর করেন হাদিউল।


চাচির সঙ্গে ঝগড়ার আগে হাদিউল তার ফুপার কাছে চাকরির জন্য খোঁজ করছিলেন। সোমবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় তার ফুপা তাকে চাকরির কথা বলে তার নিজ বাড়ি নোয়াকান্দা গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে হাদিউল রাত্রিযাপন করেন। পরে ভোর ৪টার দিকে হাদিউলকে জানানো হয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বাড়িতে রেড দিয়েছে। এ কথা বলে তাকে নোয়াকান্দা থেকে দড়িচরগামী রাস্তার মাঝ বরাবর একটি কলাবাগানের ঝোপে নিয়ে যাওয়া হয়।


সেখানে হাদিউলের হাত-পা-মুখ বেঁধে তার দুই হাতের কবজি কেটে নেন শেখ জালাল ও সাজ্জাদ মিয়া। তার চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।


এ বিষয়ে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াছ বলেন, পরকীয়ার জেরে এ ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে। তিনি আরও জানান, জালাল মিয়া একজন শীর্ষ ডাকাত দলের সদস্য। তার নামে থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।

Saturday, June 25, 2022

রিকশার ইতিকথা

 রিকশাঃ-

রিকশা বা রিক্সা বা সাইকেল রিকশা একপ্রকার মানবচালিত মনুষ্যবাহী ত্রিচক্রযান, যা এশিয়ার, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী বাহন। যদিও দেশভেদে এর গঠন ও আকারে বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায়। জাপানী রিকশাগুলো অবশ্য তিনচাকার ছিল না, সেগুলো দুই চাকায় ভর করে চলতো, আর একজন মানুষ ঠেলাগাড়ির মতো করে টেনে নিয়ে যেতেন, এধরনের রিকশাকে 'হাতেটানা রিকশা'ও বলা হয়। সাধারণত 'রিকশা' বলতে এজাতীয় হাতে টানা রিকশাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। সম্প্রতিককালে (২০১১) সাইকেল রিকশায় বৈদ্যুতিক মোটর সংযোজন করার মাধ্যমে যন্ত্রচালিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এজাতীয় রিকশার প্রচলন দেখা যায়।

বাংলা 'রিকশা' শব্দটি এসেছে জাপানী 'জিন্‌রিকিশা' (人力車, 人 জিন্ = মানুষ, 力 রিকি = শক্তি, 車 শা = বাহন) শব্দটি থেকে, যার আভিধানিক অর্থ হলো 'মনুষ্যবাহিত বাহন

পালকির বিকল্প হিসেবে ১৮৬৫-৬৯ প্রথম কে এর উদ্ভাবন করেছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হলো - জোনাথন স্কোবি নামে একজন মার্কিন মিশনারি ১৮৬৯ সালে রিকশা উদ্ভাবন করেন। স্কোবি থাকতেন জাপানের সিমলায়। ১৯০০ সালে কলকাতায় হাতে টানা রিকশা চালু হয়, তবে মালপত্র বহনের জন্য। ১৯১৪ সালে কলকাতা পৌরসভা রিকশায় যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়। ততদিনে ব্রক্ষদেশ মানে মিয়ানমারের রেঙ্গুনেও রিকশা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯১৯ সালে রেঙ্গুন থেকে রিকশা আসে চট্টগ্রামে। তবে ঢাকায় রিকশা চট্টগ্রাম থেকে আসেনি; এসেছে কলকাতা থেকে। নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে ঢাকায় রিকশা আনেন। রিকশার বহুল ব্যবহার এবং নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী কাঠামোর কারণে ঢাকাকে বিশ্বের রিকশার রাজধানী বলা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে রিকশা একটি বহুল ব্যবহৃত পুরোন যানবাহন। এদেশের আনাচে কানাচে রয়েছে রিকশা। দেশটির রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বের রিকশা রাজধানী বলা হয়। এই শহরে রোজ প্রায় ৪,০০,০০০টি সাইকেল রিকশা চলাচল করে।[১৩] গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যমতে, ঢাকায় কমপক্ষে পাঁচ লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করে এবং ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষই রিকশায় চড়ে। ২০১৫ সালের গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রকাশনায় এ সম্পর্কিত একটি বিশ্বরেকর্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৪][১৫][১৬] শহরটিতে রিকশা একদিকে যেমন পুরোন বাহন, তেমনি এই রিকশার কারণে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজট। বাংলাদেশে রিকশার ঐতিহ্য থাকলেও তাই বড় বড় সড়কগুলোতে রিকশা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় সব শহরেই রিকশা একটি পরিচিত ও সুপ্রাচীন বাহন।বাংলাদেশের রিকশা নিয়ে অনেক গবেষণাও হয়েছে

রিকশাচিত্র বাংলাদেশের একটি নিজস্ব চিত্রশিল্প।একে চিত্রকলার আলাদা একটি মাত্রা বলা যায়। যেকোনো চিত্রই রিকশার পিছনে আঁকলেই তা রিকশাচিত্র হলেও, মূলত রিকশাচিত্র বলতে উজ্জ্বল রঙে আঁকা কিছু চিত্রকে বোঝায়, যা খুব সাবলিল ভঙিতে বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করতে সক্ষম। সাধারণত বাংলাদেশের রিকশার পিছনে, হুডে এবং ছোট ছোট অনুষঙ্গে এই বিশেষ চিত্রকলা লক্ষ করা যায়।তবে ভারতের কিছু জায়গার রিকশাগুলোতেও এ ধরনের চিত্র দেখা যায়। বিশেষজ্ঞগণ এধরনের চিত্রকলাকে ফোক আর্ট, পপ আর্ট কিংবা ক্র্যাফট সব দিক দিয়েই আলোচনা করতে পছন্দ করেন। তাদের মতে, যেকোনো বস্তুরই 'ফর্ম' আর 'ডেকোরেশন' নামে দুটি দিক থাকলেও রিকশাচিত্র কেবলই একপ্রকার 'ডেকোরেশন', এর ব্যবহারিক কোনো দিক নেই। চিত্রকরদের মতে, রিকশাচিত্রের টান বা আঁচড়গুলো খুবই সাবলিল, প্রাণবন্ত এবং স্পষ্ট, এবং টানগুলো হয় ছোট ছোট ও নিখুঁত। অথচ এই বিশেষ চিত্রকলার জন্য নেই কোনো আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, একেবারে দেশজ কুটিরশিল্পের মতই শিল্পীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে শিখে থাকেন এই চিত্রশিল্প এবং নিজের কল্পনা থেকেই এঁকে থাকেন এসব চিত্র। যদিও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকজন রিকশাচিত্রের মর্যাদা সম্পর্কে অতোটা ওয়াকিবহাল নন এবং কিছুটা হেয় করেই দেখে থাকেন।

বাংলাদেশে রিকশাচিত্র ১৯৫০-এর দশক থেকে প্রচলিত, এবং রিকশার প্রায় সম্ভাব্য সবগুলো অংশই চিত্রিত করার একটা প্রয়াস লক্ষ করা যেত। জ্যামিতিক নকশার পাশাপাশি ফুল, পাখি এমনকি জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের ছবি আঁকারও প্রচলন ছিল। কখনও রিকশাচিত্রে রিকশাওয়ালার ধর্মীয় বিশ্বাস প্রতিফলিত হতো, আবার কখনও হয়তো নিছক কোনো বক্তব্য কিংবা সামাজিক কোনো বিষয় দেখা যেত। তবে আধুনিক জগতে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সহজলভ্য হওয়ায় হাতে আঁকা সেসব চিত্রকর্ম এখন আর সচরাচর দেখা যায় না, বরং বিভিন্ন জায়গা থেকে ছবি কম্পিউটারে কাটছাট করে সাজিয়ে টিনের ধাতব প্লেটে সেগক দিক থেকে স্বাতন্ত্র্য।রিকশাগুলোতে শৈল্পিক হাতের ছোয়ায় ফুটে উঠে রিকশাচিত্র।ফুল-ফল,নদ-নদী,দেশের প্রকৃতি,চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা বা দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য এসব রিকশাচিত্রে ঠাঁই পায়।


ইদ্রিস আহমেদ রিয়াজ। 

জুন ২৫, ২০২২ ইং।

চট্টগ্রাম 

ছবিঃ- প্রথম আলো।

Thursday, June 16, 2022

নামাযের উপকারিতা।

 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপকারিতাঃ

মানুষের দেহ চলমান। সুস্থতার জন্য নড়া-চড়া, হাঁটা-চলা ও ওঠা-বসা দরকার। ৫ ওয়াক্ত সালাতে মসজিদে যাওয়া-আসা করতে হয়। নামাজে ওঠা-বসা করতে হয়। এ সবই উপকারী। ৫ ওয়াক্ত সালাতের জন্য ৫টি সময় রয়েছে। এছাড়াও সুন্নত ও নফল নামাজের সময় রয়েছে। এ সময়গুলোর চিকিৎসা বিজ্ঞানগত উপকারিতা রয়েছে।


ফজরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান:

ফজরের সময় নামাজ আদায় করলে সারা রাত ঘুমের পর হালকা অনুশীলন হয়ে যায়। এ সময় পাকস্থলী খালি থাকে তাই কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজি অবসাদগ্রস্ততা ও অচলতা থেকে মুক্তি পায়। মস্তিষ্ক ফ্রি হয়ে পুনরায় চিন্তা করার জন্য প্রস্তুত হয়। এ সময়ে নামাজি হেঁটে মসজিদে যায় আর আত্মা পরিচ্ছন্ন, প্রশান্ত পরিবেশ থেকে সূক্ষ্ম অনুভূতি লাভ করে- এসবই উপকারী। এ সময়ে দেহ পরিষ্কার হয়। দাঁত পরিষ্কার, অঙ্গ ধোয়া ও পেশাব-পায়খানা থেকে পবিত্রতা অর্জন হয়ে যায়। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। ডা. মাহমুদ চুগতাই বলেন, অন্ত্ররোগ ও আলসার থেকেও বাঁচা যায়। রোমের পাদরি হিলার বলেন, ভোরের নামাজের জন্য ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাশ্চর্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। (প্রার্থনা গ্রন্থ)

জোহরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান:

মানুষ জীবিকার জন্য দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে। এতে ধুলা, ময়লা, বিষাক্ত কেমিকেল শরীরে লাগে। দেহে জীবাণু আক্রমণ করে। ওজু করলে এসব দূর হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ পুনর্জীবন লাভ করে। গরমের কারণে সূর্য ঢলে পড়ার সময় বিষাক্ত গ্যাস বের হয়। এ গ্যাস মানবদেহে প্রভাব ফেললে মস্তিষ্ক, পাগলামিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এ সময় ওজু করে নামাজ আদায় করলে এ গ্যাস প্রভাব ফেলতে পারে না ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে যায়। এ সময় আল্লাহ নামাজ ফরয করে আমাদের জন্য অনুগ্রহ করেছেন।


আসরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান:

পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। লম্ব ও বৃত্তীয়। যখন সূর্য ঢলতে থাকে তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে। এমনকি আসরের সময় একেবারেই কমে যায়। এ সময় রাতের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে। প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়। এ সময় নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্ততা, অবচেতন অনুভূতির আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে। নূরানি রশ্মি নামাজিকে প্রশান্তি দান করে।

মাগরিবের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান:

সারাদিন মানুষ জীবিকার জন্য শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায়। মাগরিবের সময় ওজু করে নামাজ আদায়ের ফলে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ হয়। এ সময় নামাজ আদায়ে পরিবারের বাচ্চারাও অংশ গ্রহণ করতে পারে। এতে বাচ্চারা অনুগত, পুণ্যশীল হয়। এ সময় পরিবারের মধ্যে আনন্দের রেশ বয়ে যায়।

এশার সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান:

মানুষ কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে রাতে খাবার খায়। এ সময় খেয়ে শুয়ে পড়লে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অল্প ব্যায়াম করে বিছানায় গেলে কোনো সমস্যা হবে না। এশার নামাজ ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপযোগী। এ নামাজ আদায়ে শান্তি পাওয়া যায়, খাদ্য হজম হয় এবং অস্থিরতা দূর হয়।

তাহাজ্জুদের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান:

এ সময়ে নামাজ আদায় করা অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা, হার্ট, স্নায়ুর সংকোচন ও বন্ধন এবং মাথার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা। ডা. মাহমুদ চুগতাই বলেন, যারা দূরের জিনিস দেখে না এ সময়ে নামাজ আদায় করা তাদের চিকিৎসা। এছাড়াও এ সময়ে নামাজ আদায় করলে বুদ্ধি, আনন্দ এবং অসাধারণ শক্তির সৃষ্টি হয় যা নামাজিকে সারাদিন উৎফুল্ল রাখে।


নামাজের শারীরিক উপকারিতাঃ-
নামাজ ফরজ ইবাদাত। আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন সব মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করেছেন। এ নামাজ পরকালের মুক্তি লাভের অন্যতম মাধ্যম। কারণ পরকালে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব সুন্দরভাবে দিতে পারবে, তার পরবর্তী হিসাব সহজ হয়ে যাবে।

আবার নামাজ দুনিয়ায় সব ধরনের অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। শুধু তাই নয়, নামাজের মাধ্যমে নামাজি ব্যক্তি অনেক শারীরিক উপকার লাভ করে। যার কিছু তুলে ধরা হলো-

দাঁড়ানো
মানুষ যখন নামাজে দাঁড়ায়; তখন সব চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

রুকু
নামাজি ব্যক্তি যখন রুকু করে এবং রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে কোমর ও হাটু ব্যাথা উপশম হয়।

সিজদা
নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজি ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে তার স্মৃতি শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার সিজদা থেকে ওঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসে এতে তার পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম হয়।

ওঠা বসা
নামাজের সময় নামাজি ব্যক্তিকে দাঁড়ানো, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে স্থির দাঁড়ানো, আবার সিজদায় যাওয়া, সিজদা থেকে ওঠে স্থিরভাবে বসা, আবার সিজদা দিয়ে দাঁড়ানো বা বসা। এ সবই মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম। এতে মানুষের শারীরিক বহুবিদ উপকার সাধিত হয়।


মানসিকতার পরিবর্তন
নামাজের মাধ্যমে মানুষের মন ও মানসিকতায় অসাধারণ পরিবর্তন আসে। গোনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদি দূরভীত হয়। ফলে বিশুদ্ধ মন নিয়ে সব কাজে সম্পৃক্ত হওয়া যায়।

দেহের কাঠামোগত উন্নতি
নামাজ মানুষের দেহের কাঠামোগত ভারসাম্যতা বজায় রাখে। ফলে স্থুলতা ও বিকলঙ্গতা হার কমে যায়। মানুষ যখন নামাজে নড়াচড়া করে তখন অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে বিশেষ কাজ করে থাকে। অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

পরিচ্ছন্ন রাখে
নামাজের জন্য মানুষকে প্রতিদিন পাঁচবার অজু করতে হয়। আর এতে মানুষের ত্বক পরিষ্কার থাকে। ওজুর সময় মানুষের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার হয় য দ্বারা বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে মানুষ সুরক্ষিত থাকি।

চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি
নামাজের জন্য মানুষ যতবার অজু করে, ততবারই মানুষের মুখমণ্ডল ম্যাসেস হয়ে থাকে। যাতে মুখমণ্ডলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষের চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি পায়, মুখের বলিরেখা ও মুখের দাগ কমে যায়।

বিশেষ করে…
নামাজ মানুষের মানসিক, স্নায়ুবিক, মনস্তাত্ত্বিক, অস্থিরতা, হতাশা-দুশ্চিন্তা, হার্ট অ্যাটাক, হাড়ের জোড়ার ব্যাথা, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর আলসার, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস,  চোখ এবং গলা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত,নামাজ মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না।

পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের মধ্যে নামাজের মতো এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজির জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম। যার প্রভাব মানুষের সব অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নড়াচড়ার ফলে শক্তি সৃষ্টি হয় এবং সুস্বাস্থ্য অটুট থাকে।


পরিশেষে…
নামাজের উপকারিতায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ শুধু তাই নয়, নামাজ মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধনের অনন্য হাতিয়ার।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময়মতো নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ফজরের নামাজের ১০ উপকারিতা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلاةُ ، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِকেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তাবরানি ১৯২৯)

মূলত নামাজ এমন ইবাদত যা সারা বছর দৈনিক পাঁচ বার আদায় করতে হয়। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অবস্থাতেই নামাজ মাফ হয় না। এমনকি মৃত্যুশয্যাতেও নামাজ হতে বিরত থাকার কোনো বিধান নেই।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর নামাজের গুরুত্ব আরো বেশি। হাদিসে এর এত বেশি গুরুত্ব এসেছে যে, যদি একজন মুমিন তন্মধ্য থেকে মাত্র একটিও মনে রাখে তাহলেও এক্ষেত্রে তার গাফলতি অনায়াসে দূর হয়ে যাবে। তার হিম্মত বেড়ে যাবে। ঘুম ও অলসতা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হবে। নব প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সে ফজরের জামাতে শরিক হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ব্রতী হবে—ইনশা আল্লাহ।
এ লক্ষে ফজরের নামাজ আদায়ে বিশেষ ১০ টি উপকারী দিক পাঠকের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো।১. ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সমান। উসমান ইবন আফফান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ ، وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ
যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ঈশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। (মুসলিম ১০৯৬)২. ওই দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকার দুর্লভ সৌভাগ্য। ফজরের নামাজ পড়লেই শুধু এ-ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। যুনদব ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সুফইয়ান আলবাজালি রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يُتْبِعَنَّكُمُ اللَّهُ بِشَيْءٍ مِنْ ذِمَّتِهِ
যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদেরকে কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন। (তিরমিযি ২১৮৪)
৩. ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে।

বুরাইদা আলআসলামি রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِযারা আঁধারে (ফজর নামাযে) মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদের কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ ৪৯৪)

৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ। আবূ যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে,لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا» يعني: الفَجْرَ والعَصْرَযে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম ৬৩৪, নাসায়ি ৪৭১, ৪৮৭, আবু দাউদ ৪২৭, আহমদ ১৬৭৬৯, ১৭৮৩৩)

৫.মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে। আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواًমুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত। (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১)

৬. সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে। আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ ، وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلاَةِ الفَجْرِ وَصَلاَةِ العَصْرِ ، ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ ، فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ : كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي ؟ فَيَقُولُونَ : تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ ، وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَতোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফিরিশতাদেরকে প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদেরকে কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদেরকে নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনো তারা নামাজরত ছিল। (বুখারি ৫৪০)

৭. দুনিয়া আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয়ে যাবে। আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَاফজরের দুই রাকাত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (মুসলিম ১২৪০)

৮. পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে, যদি সে সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে। আনাস ইবন মালিক রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ ، وَعُمْرَةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍযে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ান্তে বসে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থেকে সূর্য উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত নফল নামাজ (ইশরাক) আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে। ‘পরিপূর্ণ’ এ শব্দটি তিনি তিনবার বলেছেন। (তিরমিযি ৫৮৬)

৯. তুলনাহীন গণিমত লাভ করবে। উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ নাজদের দিকে এক অভিযানে একটি সেনাদল পাঠান। তারা প্রচুর গণিমতের সম্পদ অর্জন করে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। তাদের সাথে যায় নি এমন এক লোক বলল, অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে উত্তম গণিমত নিয়ে এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি আর কোন সেনাদলকে আমরা ফিরে আসতে দেখি নি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى قَوْمٍ أَفْضَلُ غَنِيمَةً وَأَسْرَعُ رَجْعَةً ؟ قَوْمٌ شَهِدُوا صَلَاةَ الصُّبْحِ ثُمَّ جَلَسُوا يَذْكُرُونَ اللَّهَ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأُولَئِكَ أَسْرَعُ رَجْعَةً وَأَفْضَلُ غَنِيمَةًআমি কি তোমাদেরকে এমন এক দলের কথা বলব না যারা এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি উত্তম গণিমত নিয়ে ফিরে আসে? যারা ফজরের নামাজের জামা’আতে হাযির হয়, (নামাজ শেষে) সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহ্ তা’আলার যিকির করতে থাকে, তারাই অল্প সময়ের মধ্যে উত্তম গণিমতসহ প্রত্যাবর্তনকারী। (তিরমিযি ৩৬৪১)

১০. কেয়ামতের দিন সরাসরি আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য লাভ। আর এটি হচ্ছে সর্বোত্তম পুরস্কার। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল বাজলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন,أَمَا إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا، لاَ تُضَامُّونَ ـ أَوْ لاَ تُضَاهُونَ ـ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا ‏”‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَاশোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য উঠার আগের নামাজ ও সূর্য ডুবার আগের নামাজ আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, “সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ করুন।” (বুখারি ৫৭৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথা নিয়মে জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত, মর্যাদা ও উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

নামায আদায়কারীর পুরস্কার ও উপকারিতা

আখেরাতের পুরুস্কার

উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রা. বলেন: নবী করীম সা. এর এ রকম অভ্যাস ছিল যে, তিনি যখন ঘরে তাশরীফ আনতেন কোন লৌকিকতা ছাড়াই ঘরবাসীদের সাথে প্রাণ খুলে কথাবার্তা বলতেন। কিন্তু মুয়াজ্জিনের আজান শোনা মাত্রই তিনি এরূপ ব্যাকুল হয়ে উঠতেন যে, সাথে সাথে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন এবং নামাযের প্রস্তুতি নিতেন। তখন তাঁর অবস্থা দেখে মনে হত, আমরা যেন তাঁর নিকট সম্পূর্ণ অপরিচিত।

এর কারণ এই ছিল যে, আল্লাহ তায়া’লা এবং তাঁর বান্দার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র সূত্র হচ্ছে নামায; সুতরাং এই নামাযের জন্য স্ত্রী-পুত্র তো বটেই এমনকি সমগ্র দুনিয়া এবং দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবকিছু বিনষ্ট হলে ও কিছু আসে যায় না। মহান রাব্বুল আলামীন নামাযী বান্দাদের জন্য কি পুরস্কার রেখেছেন সে সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের কয়েকটি উদ্ধৃতি নিম্নে পেশ করা হল।

১. মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন ঃالذين يقيمون الصلوة ومما رزقنهم ينفقون- اولئك هم المومنون حقا- لهم درجت عند ربهم ومغفرة ورزق كريم-
‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক। [ সূরা আনফাল-৩-৪]
২. আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন:
والذين هم على صلوتهم يحافظون- اولئك هم الورثون- الذين يرثون الفردوس هم فيها خلدون-
‘‘আর যারা তাদের নামায সমূহের হিফাযত করে তারাই হবে অধিকারী। অধিকারী হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের তাতে চিরকাল থাকবে। [সূরা মুমিনুন -৯ -১১]

৩. হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেন ঃ
আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি আমার নিজের সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, যে ব্যক্তি যথা সময়ে নামায সমূহের পূর্ণ হিফাযত করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে নামায সমূহের হিফাযত করবে না, তার জন্য আমার কাছে কোন অঙ্গীকার নেই। [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]

৪. একবার রাসুলুল্লাহ সা. সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেনঃ যদি তোমাদের মধ্যে কারো ঘরের পাশ দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হয় যার মধ্যে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তাহলে বল, তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবীগণ আরয করলেন না, তার শরীরে কোন ময়লাই থাকবেনা। নবী করীম সা. বললেন, এরূপ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তা’য়ালা এসব নামাযের মাধ্যমে তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দেবেন। [বুখারী, মুসলিম]

৫. হযরত আবুযার রা. বর্ণনা করেনঃ একবার শীতের সময় যখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল, নবী করীম সা. বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং গাছের দু’টি ডাল ধরে ঝাঁকি দেয়া শুরু করলেন এবং ঝরঝর করে (শুকনো) পাতা পড়তে লাগল। তখন নবী সা. বললেন, হে আবুযার! যখন কোন মুসলমান একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকতার সাথে নামায পড়ে, তার গুনাহ সমূহ ঠিক এভাবে ঝরে পড়ে যেমন এ গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ছে। [মুসনাদে আহমদ]

৬. বান্দার চারটি আমল নিয়ে ফেরেশতারা পরস্পরে বলাবলি করে। আমল সমূহ নিম্নরূপ ঃ
* নামাযের পর মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করা।
* এক নামায শেষ করে পরবর্তী নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকা।
* জামায়া’তে নামায পড়ার আশায় পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
* এবং অসুস্থ অবস্থায় শীতের কষ্ট উপেক্ষা করেও পরিপূর্ণ অযু করা। এ চারটি কাজের মাধ্যমে নামাযী ব্যক্তি সুখে-শান্তিতে বাস করবে এবং নেককার বান্দা হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হবে। আর সে সদ্যজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হবে। [ মিশকাত]

৭. হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি ধীরস্থিরভাবে পরিপূর্ণ আদবের সাথে যথা নিয়মে নামায আদায় করবে আল্লাহ্ তায়া’লা তাকে পাঁচটি পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত করবেন।

* তার রিজিক ও জীবিকার যাবতীয় কষ্ট দূর করে দিবেন।
* তার কোন কবর আযাব হবেনা।
* কিয়ামতের দিন আমলনামা তার ডান হাতে প্রদান করা হবে।
* সে বিদ্যুতগতিতে পুলসিরাত পার হতে পারবে।
* সে বিনা হিসেবে আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ফাজায়েলে নামাজ]

৮. হাদীস শরীফে আছে যে ব্যক্তি নামায পড়ে মসজিদ হতে বের হয়, কিন্তু পরবর্তী নামাযে শরীক না হওয়া পর্যন্ত তার অন্তঃকরণ মসজিদের দিকেই থাকে এবং সে যথাসময়ে নামায সম্পন্ন করে সে ব্যক্তি কিয়ামতের কঠিন দিবসে আল্লাহ্র আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে। [মিশকাত]

৯. রাসূলে কারীম সা. বলেছেন ঃ তোমরা সর্বদা গুনাহর আগুনে জ্বলতেছ। তোমরা যখন ফজরের নামায আদায় কর, তখন উহা নিভে যায়। ফজর হতে জোহর পর্যন্ত আবার পাপের আগুনে জ্বলতে থাক। যখন জোহরের নামায শেষ কর তখন উহা নিভে যায়। পুনরায় জোহর হতে আসর পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে তার মধ্যে পোড়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে থাক; কিন্তু আসরের নামায সমাপ্ত করার সংগে সংগে উহা নিভে শীতল হয়ে যায়। আবার আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত সময় উহা এমনভাবে জ্বলে উঠে যে, উহার শিখা তোমাদেরকে ছাই করে ফেলতে চায়। কিন্তু মাগরিবের নামায আদায় করা মাত্রই উহা নির্বাপিত হয়ে যায়। তারপর ই’শা পর্যন্ত তোমাদের পাপের আগুন আবার তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে এবং যখন তোমরা ই’শার নামায সম্পন্ন কর, তখন উহা সম্পূর্ণরূপেই নিভে যায়। তখন তোমরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে ঘুমিয়ে থাক। ঘুম ভাংগা পর্যন্ত তোমাদের আমল নামায় আর কোন প্রকার গুনাহ লিখা হয়না। [তারগীব ও তারহীব]

 সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ নামাযের পুরস্কার

১. ফজরের সুন্নাত ঃ আয়েশা রা. হতে বর্ণিতঃ নবী করীম সা. বলেছেন, ফজরের দু’রাকাআ’ত সুন্নাত সমস্ত দুনিয়া ও উহার মধ্যবর্তী সকল নিয়ামত হতে উত্তম। [মুসলিম]

২. জোহরের সুন্নাত ঃ উম্মে হাবীবা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকআ’ত এবং পরে দু’রাকআ’ত সুন্নাত যথারীতি আদায় করে আল্লাহ তায়া’লা তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। [তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]

৩. আসরের সুন্নাত ঃ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকাআ’ত সুন্নাত পড়ে আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন। [আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমদ]
* হুজুর সা. আসরের সুন্নাত কখনো কখনো দু’রাকাআ’ত পড়েতন।
৪. মাগরিবের সুন্নাত ঃ

যে ব্যক্তি মাগরিবের (ফরযের) পর দু’রাকাআ’ত স্ন্নুাত পড়ে তার সে নামায উপরস্থ ইল্লিয়ীনে পৌঁছানো হয়। [আবু দাউদ]

৫. ই’শার সুন্নাত ঃ যে ব্যক্তি দিনরাত ১২ রাকাআ’ত নামায পড়বে। তার জন্য বেহেশতে ঘর নির্মান করা হবে। চার রাকআ’ত জোহরের পূর্বে, দু’রাকআ’ত জোহরের পরে, দু’রাকাআ’ত মাগরিবের পরে, দু’রাকাআ’ত ই’শার পরে এবং দু’রাকাআ’ত ফজরের পূর্বে। [বায়হাকী]

Saturday, June 4, 2022

গান শুনার পরিণতি

 ◾গান শোনার পরিনাম


একজন বৃদ্ধ শায়খ গল্পটা শুনিয়েছেন, যিনি আরবের একটি মসজিদের ইমাম। তিনি বলেন-একদিন ফজর নামাজ পড়ে বসে আছি এমন সময় তেরো চৌদ্দ বছরের একটি বালক দৌঁড়ে আসল হন্তদন্ত হয়ে। হাফাতে হাফাতে সে আমাকে বলল,আমার আব্বা দ্রুত আপনাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে বলেছেন।


আমি তার সাথে দ্রুতপদে তাদের বাসায় গেলাম। দেখলাম, ছেলেটির বাবা আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। পঞ্চাশোর্ধ একজন লোক, অস্থির হয়ে আমাকে তিনি বললেন, হুজুর! আমার মেয়ে মৃত্যু পথযাত্রী, তাকে একটু তালকীন করুন।


আমি ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম, দেখলাম বোরকাবৃত করে রাখা হয়েছে তরুণী মেয়েটিকে। তার অবস্থা দেখেই বুঝতে পারলাম, আর বেশি সময় বাকি নেই। শেষ নিঃশ্বাস গুলো শেষ হতে যতক্ষণ।

আমি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বললাম, মা ! বলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ / কয়েকবার এভাবে তালকীন করলাম।


সে কালিমা তো পড়লোই না, উল্টো চিৎকার করে আমাকে বলল, আমার বুক ভেঙ্গে আসছে, আমার পাজরের হাড্ডিগুলো মচরে যাচ্ছে।


আমি আবার কালিমার তালকিন করলাম, এবার সে এমন একটি বাক্য বলল যা বজ্রের মতো শোনাল আমার কানে। মেয়েটি বলল, ঐ যে আমার জাহান্নাম আমাকে দেখানো হচ্ছে। খোদার কসম, আমি আমার দোযখ দেখতে পাচ্ছি।


এ-কয়টা কথা বলেই সে চলে গেল, হয়তো যে ভয়ংকর স্থান তাকে দেখানো হয়েছিল সেদিকেই নিয়ে যাওয়া হলো কিশোরি মেয়েটির রুহকে। কারণ, যে যে স্থানের অধিবাসী মৃত্যুর পূর্বে তাকে সে স্থানটিই দেখানো হয়।


আমি প্রচণ্ড আঘাত পেলাম, ভয়ে দেহ কাপতে লাগল, মনটা বিষণ্ন হয়ে উঠল। এমন একজন মানুষকে আমাকে দেখানো হলো, যে কি না জাহান্নামে যাচ্ছে আমাদেরকে জানিয়ে। এর চেয়ে দুঃখের ও আক্ষেপের বিষয় আর কী হতে পারে!


আমি সবিনয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা ভাই ! সে কী এমন করতো যে জন্য আজ তার এমন ভয়াবহ পরিণতি হলো ?


মেয়েটির বাবা ঢুকরে কেদে উঠলেন। বললেন, হুজুর ! আমার মেয়ে সবসময় কানে এয়ারফোন দিয়ে গান শুনতো। এই গান-বাজনায় ডুবে সে কোন এবাদতই করতো না, নামাজ- রোজার প্রতি তার ছিল প্রচণ্ড অনীহা।


বৃদ্ধ ইমাম সাহেব বলেন- বুঝতে পারলাম গুনাহ ও পাপের প্রতি নির্ভিক আসক্তি ও এবাদতের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনের কারণেই মৃত্যুর সময় কালিমা পরে দেয়ার পরও, মেয়েটি কালিমা পড়তে পারছিল না। তার বুক সংকীর্ণ হয়ে ভেঙ্গে আসছিল।


★ঘটনার সত্যতা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ই ভালো জানেন। তবে এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।

যাদের গান শুনার শখ আছে তাদের কাছে অনুরোধ, গান শুনা থেকে বিরত থাকুন। সেই সময় হেডফোন দিয়ে কোরআনের তেলওয়াত শুনুন। হামদ, নাতে রাসুল (সাঃ) শুনুন। বড় বড় আলেম ওলামাদের ওয়াজ, লেকচার শুনুন, যা নিজের জীবনের জন্য পথেয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ।


◾লেখাটি সংগৃহীত❤️

অভাবে আত্মহত্যা কৃষকের।

  নোয়াখালীতে অভাব সইতে না পেরে এক কৃষকের আত্মহত্যা!  নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এক কৃষক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অ...