Saturday, June 25, 2022

রিকশার ইতিকথা

 রিকশাঃ-

রিকশা বা রিক্সা বা সাইকেল রিকশা একপ্রকার মানবচালিত মনুষ্যবাহী ত্রিচক্রযান, যা এশিয়ার, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী বাহন। যদিও দেশভেদে এর গঠন ও আকারে বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায়। জাপানী রিকশাগুলো অবশ্য তিনচাকার ছিল না, সেগুলো দুই চাকায় ভর করে চলতো, আর একজন মানুষ ঠেলাগাড়ির মতো করে টেনে নিয়ে যেতেন, এধরনের রিকশাকে 'হাতেটানা রিকশা'ও বলা হয়। সাধারণত 'রিকশা' বলতে এজাতীয় হাতে টানা রিকশাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। সম্প্রতিককালে (২০১১) সাইকেল রিকশায় বৈদ্যুতিক মোটর সংযোজন করার মাধ্যমে যন্ত্রচালিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এজাতীয় রিকশার প্রচলন দেখা যায়।

বাংলা 'রিকশা' শব্দটি এসেছে জাপানী 'জিন্‌রিকিশা' (人力車, 人 জিন্ = মানুষ, 力 রিকি = শক্তি, 車 শা = বাহন) শব্দটি থেকে, যার আভিধানিক অর্থ হলো 'মনুষ্যবাহিত বাহন

পালকির বিকল্প হিসেবে ১৮৬৫-৬৯ প্রথম কে এর উদ্ভাবন করেছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হলো - জোনাথন স্কোবি নামে একজন মার্কিন মিশনারি ১৮৬৯ সালে রিকশা উদ্ভাবন করেন। স্কোবি থাকতেন জাপানের সিমলায়। ১৯০০ সালে কলকাতায় হাতে টানা রিকশা চালু হয়, তবে মালপত্র বহনের জন্য। ১৯১৪ সালে কলকাতা পৌরসভা রিকশায় যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়। ততদিনে ব্রক্ষদেশ মানে মিয়ানমারের রেঙ্গুনেও রিকশা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯১৯ সালে রেঙ্গুন থেকে রিকশা আসে চট্টগ্রামে। তবে ঢাকায় রিকশা চট্টগ্রাম থেকে আসেনি; এসেছে কলকাতা থেকে। নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে ঢাকায় রিকশা আনেন। রিকশার বহুল ব্যবহার এবং নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী কাঠামোর কারণে ঢাকাকে বিশ্বের রিকশার রাজধানী বলা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে রিকশা একটি বহুল ব্যবহৃত পুরোন যানবাহন। এদেশের আনাচে কানাচে রয়েছে রিকশা। দেশটির রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বের রিকশা রাজধানী বলা হয়। এই শহরে রোজ প্রায় ৪,০০,০০০টি সাইকেল রিকশা চলাচল করে।[১৩] গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যমতে, ঢাকায় কমপক্ষে পাঁচ লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করে এবং ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষই রিকশায় চড়ে। ২০১৫ সালের গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রকাশনায় এ সম্পর্কিত একটি বিশ্বরেকর্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৪][১৫][১৬] শহরটিতে রিকশা একদিকে যেমন পুরোন বাহন, তেমনি এই রিকশার কারণে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজট। বাংলাদেশে রিকশার ঐতিহ্য থাকলেও তাই বড় বড় সড়কগুলোতে রিকশা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় সব শহরেই রিকশা একটি পরিচিত ও সুপ্রাচীন বাহন।বাংলাদেশের রিকশা নিয়ে অনেক গবেষণাও হয়েছে

রিকশাচিত্র বাংলাদেশের একটি নিজস্ব চিত্রশিল্প।একে চিত্রকলার আলাদা একটি মাত্রা বলা যায়। যেকোনো চিত্রই রিকশার পিছনে আঁকলেই তা রিকশাচিত্র হলেও, মূলত রিকশাচিত্র বলতে উজ্জ্বল রঙে আঁকা কিছু চিত্রকে বোঝায়, যা খুব সাবলিল ভঙিতে বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করতে সক্ষম। সাধারণত বাংলাদেশের রিকশার পিছনে, হুডে এবং ছোট ছোট অনুষঙ্গে এই বিশেষ চিত্রকলা লক্ষ করা যায়।তবে ভারতের কিছু জায়গার রিকশাগুলোতেও এ ধরনের চিত্র দেখা যায়। বিশেষজ্ঞগণ এধরনের চিত্রকলাকে ফোক আর্ট, পপ আর্ট কিংবা ক্র্যাফট সব দিক দিয়েই আলোচনা করতে পছন্দ করেন। তাদের মতে, যেকোনো বস্তুরই 'ফর্ম' আর 'ডেকোরেশন' নামে দুটি দিক থাকলেও রিকশাচিত্র কেবলই একপ্রকার 'ডেকোরেশন', এর ব্যবহারিক কোনো দিক নেই। চিত্রকরদের মতে, রিকশাচিত্রের টান বা আঁচড়গুলো খুবই সাবলিল, প্রাণবন্ত এবং স্পষ্ট, এবং টানগুলো হয় ছোট ছোট ও নিখুঁত। অথচ এই বিশেষ চিত্রকলার জন্য নেই কোনো আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, একেবারে দেশজ কুটিরশিল্পের মতই শিল্পীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে শিখে থাকেন এই চিত্রশিল্প এবং নিজের কল্পনা থেকেই এঁকে থাকেন এসব চিত্র। যদিও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকজন রিকশাচিত্রের মর্যাদা সম্পর্কে অতোটা ওয়াকিবহাল নন এবং কিছুটা হেয় করেই দেখে থাকেন।

বাংলাদেশে রিকশাচিত্র ১৯৫০-এর দশক থেকে প্রচলিত, এবং রিকশার প্রায় সম্ভাব্য সবগুলো অংশই চিত্রিত করার একটা প্রয়াস লক্ষ করা যেত। জ্যামিতিক নকশার পাশাপাশি ফুল, পাখি এমনকি জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের ছবি আঁকারও প্রচলন ছিল। কখনও রিকশাচিত্রে রিকশাওয়ালার ধর্মীয় বিশ্বাস প্রতিফলিত হতো, আবার কখনও হয়তো নিছক কোনো বক্তব্য কিংবা সামাজিক কোনো বিষয় দেখা যেত। তবে আধুনিক জগতে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সহজলভ্য হওয়ায় হাতে আঁকা সেসব চিত্রকর্ম এখন আর সচরাচর দেখা যায় না, বরং বিভিন্ন জায়গা থেকে ছবি কম্পিউটারে কাটছাট করে সাজিয়ে টিনের ধাতব প্লেটে সেগক দিক থেকে স্বাতন্ত্র্য।রিকশাগুলোতে শৈল্পিক হাতের ছোয়ায় ফুটে উঠে রিকশাচিত্র।ফুল-ফল,নদ-নদী,দেশের প্রকৃতি,চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা বা দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য এসব রিকশাচিত্রে ঠাঁই পায়।


ইদ্রিস আহমেদ রিয়াজ। 

জুন ২৫, ২০২২ ইং।

চট্টগ্রাম 

ছবিঃ- প্রথম আলো।

No comments:

Post a Comment

অভাবে আত্মহত্যা কৃষকের।

  নোয়াখালীতে অভাব সইতে না পেরে এক কৃষকের আত্মহত্যা!  নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এক কৃষক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অ...